হাসিন জাহান
ঢাকা, বাংলাদেশ

আমি হাসিন। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পৌঁছেছি জীবনের প্রায় মাঝ বরাবর। পথ চলতে চলতে অনেক কিছু দেখা হয়েছে, জানা হয়েছে, শেখা হয়েছে। অনেক সময় চোখের দেখার বাইরেও অনেক বিষয় অনুধাবন করেছি ভিন্নভাবে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনই বোধহয় এক একটা উপন্যাস। আমার জীবনের উপন্যাসের পাতাগুলো থেকে কিছু পাতা ছিঁড়ে ডিজিটাল স্মৃতির খাতায় জমা রাখার জন্য এই ব্লগ। আর তাতে যদি কারো ভালো লাগে, সেটা হবে বাড়তি পাওনা। একটাই জীবন, তাই এর প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে উঠুক আনন্দময় আর আলোকিত!

খোঁজ করুন
খোঁজ করুন
আপন ভাবনা

ফেলে আসা দিনগুলো

on
September 16, 2019

মায়েরা সাধারণত সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন থাকেন। ক্লাস-ওয়ার্কের খাতা নিরীক্ষা করেন, হোম-ওয়ার্কের তাগাদা দিতে গিয়ে পারলে নিজেই করে দেন।পরীক্ষার আগে মাথার দিব্যি আর পরিবারের মান-সম্মানের দোহাই দিয়ে যে প্যারা দেন সে কথা নাই বা বললাম! আর পরীক্ষার পরে শুরু হয় নাম্বারের কড়চা, কে কার চেয়ে কয় দশমিক কত কম পেয়েছে, তা নিয়ে গবেষণা আর নিজের সন্তানকে ছ্যাঁচাডলা। আর যারা ভালো করেছে, তাদের রেজাল্ট-শিট ফেসবুকে আপলোড দিয়ে তবেই মা-বাবার দায়িত্ব শেষ- তা সে প্লে-গ্রুপই হোক অথবা পিএইচডি!

আমার ছোট্ট ছেলেটা কখন-কীভাবে যে বড় হয়ে গেল তা বুঝতেই পারলাম না! এই তো মাত্র কদিন আগে, ভর্তির জন্য নিয়ে গেলাম এক নামকরা স্কুলে। সেখানে ছেলের না, বরং বাবা-মা হিসেবে আমাদেরকেই ইন্টারভিউ দিতে হলো। তবে ইন্টারভিউ তে পাশ করতে পারলাম না। কারণ আমাদের তখন গাড়ি থাকলেও ড্রাইভার ছিল না। কাজেই প্যারেন্টস হিসেবে আমরা ছেলেকে ভর্তি করানোর যোগ্যতা হারালাম। অতএব আর নামিদামি কোনো স্কুলে ভর্তি করানোর দুঃসাহস করলাম না। বরং কেবলমাত্র শুরু হয়েছে এমন একটা নতুন স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করলাম।

আমি ট্যুরে গেলে আমার ছেলে নিয়মিত স্কুল ফাঁকি দিত। আমার ছোটবেলার মতো ওরও প্রায় দিনই সকালবেলায় ঘন্টাখানেকের জন্য পেটে ব্যথা হতো। ভুক্তভোগী হিসেবে আমি বিষয়টি নিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া না করাই শ্রেয় বলে মনে করতাম।

চাকুরে মা হিসেবে অফিস শেষে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যখন পড়াতে বসতাম তখন কয়েক মিনিট বাদেই মাথা গরম হয়ে যেত। শুরু করতাম রাগারাগি বকাবকি। কয়েক দিনের মধ্যেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম: আমি একী করছি? সারা দিনে বাচ্চাটাকে কাছে পাই মাত্র কয়েক ঘন্টা। সেই সময়টুকুও যদি বকাঝকা করতে থাকি, তবে সম্পর্ক কোথায় গিয়ে ঠেকবে! দরকার নেই আমার এমন পড়াশুনা করিয়ে বিদ্যার জাহাজ বানানোর। অবশেষে খুঁজেপেতে এক ছাত্র জোগাড় করে নিয়ে আসলাম যে আমার ছেলেকে পড়াবে। তাকে শর্ত দিলাম, ছেলে যেন ওর সাথে একটু ভালো সময় কাটাতে পারে। পরীক্ষায় প্রথমদিকে থাকা জরুরি না, শুধুমাত্র পাশ করলেই আমি খুশি। আমার মতো মা পাওয়া ভাগ্য বটে!

স্কুলের নিয়মকানুন খুবই কড়া। অদ্ভুত হলেও সত্য যে ওর ক্লাসের বেশিরভাগ মা-ই, হয় স্কুলটিচার অথবা হোম-মেকার। আমিই একটু ব্যতিক্রম, ওয়ার্কিং-মাদার। তাতে যে আমি অন্যদের সুনজরে ছিলাম ব্যাপারটা সেরকম ছিল না। ঘটনাবহুল প্যারেন্টস মিটিংগুলোতে আমি যখন যেতাম, আমার ছেলে আর তার বন্ধুরা মহা উৎসাহে অপেক্ষা করতো এইবার বুঝি একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে!

একবারের ঘটনা। ভাইস প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকতেই তিনি চোস্ত ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন: আপনার ছেলে ক্লাসে হাত তুলে প্রশ্নের উত্তর দেয় না বা কখনও কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে না। কেন? ও কী খুব বেশি জানে?

প্রশ্নের প্রথম অংশটা ঠিকই ছিল, তবে দ্বিতীয় অংশটা শুনে মেজাজ খুব খারাপ হলো। আমি ঠাণ্ডা গলায় খাঁটি বাংলায় বললাম: আপনার প্রশ্নের দুরকম উত্তর হতে পারে। প্রথমত সবাইকে কি হাত তুলে উপযাচক হয়ে কথা বলতে হবে? অনেকেই লাজুক হতে পারে, সবার নেচার তো একরকম না। দ্বিতীয়ত আপনারা ক্লাসে কীরকম পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন, যে আমার ছেলে হাত তুলে কথা বলতে সাহস পায় না? আপনারই আসলে আমাকে জানানো উচিত যে কীসের ভয়ে আমার ছেলে আপনার ক্লাসে কথা বলে না? উনি থতমত খেয়ে আর কথা বাড়ালেন না।

ও যখন ক্লাস সিক্স/সেভেনে পড়ে, তখন আবার স্কুল থেকে তলব এলো। এবার অপরাধ ওরা কয়েক জন বন্ধু মিলে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে অন্য এক বন্ধুকে পঁচিয়েছে। কোনোভাবে সে ব্যাপারটা টিচারদের নজরে পড়েছে। তখন ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলা স্কুল থেকে নিষেধ ছিল। যাই হোক অপরাধ যখন করেছে, তখন মা হিসেবে আমাকে তো জবাবদিহি করতেই হবে। আমি আবার রাজসাক্ষী! আসল কথা হলো- নিজের ফেসবুক একাউন্ট খোলার সময় আমি ওর হেল্প নিয়েই করেছি! ব্যবহার করার টিপসগুলোও ওর কাছ থেকে শেখা। এ কাজে ও আমার গুরু, ফলে এখন ওকে প্রটেক্ট করা আমার নৈতিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে!

স্কুলে যেয়ে দেখি ছোটখাটো একটা আদালত বসেছে। গোটা চারেক শিক্ষক-শিক্ষিকা টেবিলের একধারে বসে একে একে ওর বন্ধুদের মা-বাবাদের ডাকছেন আর ধোলাইপর্ব শেষে তারা মাথা নিচু করে বের হয়ে আসছেন। আমার তো তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। শুরুতেই সারেন্ডার করে বললাম: ছেলে ভুল করেছে। স্কুল থেকে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলা ঠিক হয়নি। আমার সহজ স্বীকারোক্তিতে তারা বোধহয় মহা বিরক্ত হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, বিষয়টি আমি জানতাম কি না। মিথ্যা বলার উপায় নাই, বললাম: অবশ্যই জানতাম, তবে মানা করি নাই সেটা আমার ভুল হয়েছে। এবারও আমার উত্তরে উনারা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। এবার আরও কড়া গলায় বললেন: আপনি কি ওর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড নিয়েছেন? চেক করে দেখেছেন কী করে ওখানে? আমি খুব অবাক হয়ে বললাম: পাসওয়ার্ড ওর একটা পার্সোনাল বিষয়, আমি কেন আরেক জনের পাসওয়ার্ড নিয়ে তার প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করবো? শুনে ওনারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন: আপনি তো ওয়ার্কিং-মাদার, ছেলেকে যথেষ্ট সময় দেন না। সে কারণেই আপনার ছেলে এধরনের কাজ করছে। আমার মাথায় এবার আস্তে আস্তে রক্ত উঠছে। ঠাণ্ডা গলায় বললাম: আমি সারাদিন বাচ্চার পেছনে লেপ্টে থাকার চাইতে কম অথচ কোয়ালিটি সময় দিতে চেষ্টা করি।

এবার সিচুয়েশন ক্লাইমেক্সের দিকে মোড় নিল। তীব্র অভিযোগে আমাকে মোটামুটি ঝাঁজরা করার পরে অনেকটা অপ্রাসঙ্গিকভাবে বললেন: আজকে আপনার ছেলে যদি গাড়ি এক্সিডেন্ট করে আসে, তাহলে কি কালকে আপনি তার হাতে আবার গাড়ির চাবি তুলে দিবেন? অনেকক্ষণ পরে সুযোগ পেয়ে আমি এবার ভিলেনের হাসি দিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বললাম: আমি যদি ছেলেকে গাড়ি চালানো শিখাতে চাই, তবে তার হাতে তো আবার চাবি দিতে হবে, তাই না? এবার প্রশ্নকর্তাকে সরাসরি প্রশ্ন করলাম: এই মুহূর্তে আপনি নিজের বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন যে, আপনি নিজে এই বয়সে কোনো ধরনের অন্যায় করেননি? এবং তা আপনার মা-বাবাকে গোপন করেননি?

আমার প্রশ্নে রাগে-দুঃখে উনারা বললেন: আপনি এখন আসতে পারেন। হ্রষ্টচিত্তে আমি বেরিয়ে আসলাম। পরবর্তীতে জানলাম শাস্তিস্বরূপ ওদের তিন বন্ধুকে সপ্তাহখানেক টয়লেট পরিষ্কার করার কাজ দেয়া হয়েছিল। ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম: নতুন এসাইনমেন্ট করতে তোদের কেমন লাগছে? উত্তরে জানাল: বোরিং ক্লাস করার চাইতে বেশ ভালই লাগছে! স্যানিটেশন নিয়ে আমার কাজ। মায়ের কাজের প্রতি ছেলের ভালোলাগার কথা জেনে গর্বে আমার ছাতি ফুলে গেল!

ছেলে আমার মহা অলস। পড়াশোনা যত কম করা যায়, সেই চেষ্টা সব সময়। তবে কিছু বিষয়ে সে খুব সিরিয়াস।যেমন, সাধারণত সে মিথ্যে বলে না। শুধু স্কুলে না যেতে চাইলে পেটে ব্যথা হয়। আর ট্যুরে থাকলে যখন ফোন করে হোম-ওয়ার্কের কথা জিজ্ঞেস করি, তখন জবান বন্ধ করে বসে থাকে। আমিও খুব বেশি মাথা ঘামাই না।

দেখতে দেখতে ক্লাস এইটে উঠে গেল। এবার সাইন্স-আর্টস ভাগ হবার পালা। ছেলে বলল: আমি একাউন্টিং নিবো। কমার্স এর সাবজেক্ট-গুলোতে সবচেয়ে কম পড়া লাগবে। আমি বললাম, তথাস্তু। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুমহল সবাই আমাকে ছি ছি করলেন: ছেলে সাইন্স না নিলে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবার সুযোগ থাকবে না! আপনি এ কী করলেন! আমি চুপ করে থাকলাম। পড়াশোনা যে করবে, সিদ্ধান্ত তো তারই হওয়া উচিত, তাই না? ওদের স্কুলে নিয়ম করল প্রথম ছমাস সবগুলো সাবজেক্ট পড়তে হবে, তারপর চলবে সাবজেক্টের বাছাইপর্ব। তিন মাসের মাথায় ছেলে এসে জানালো: আম্মু আমি একাউন্টিং-ইকোনমিক্স এসব পড়বো না। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম: তবে কী পড়বি? ও বললো: ওগুলোর চেয়ে ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথ-বায়োলজি সোজা। আমি আবারো বললাম: তথাস্তু। অবশেষে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে চারটে সাবজেক্ট-ই নিল। পাসও করল যথেষ্ট ভালোভাবে।

অলস ছেলে এবারে এ লেভেল দেবে। এসে বলল: স্কুলে যাওয়া আর কোচিং- একসাথে করতে পারবো না। যেকোনো একটা অপশন দাও। সে বেছে নিলো কোচিং করা, তাও আবার বাসায়। কোনো কোচিং সেন্টারে বা হাইলি প্রফেশনাল টিচারের কাছে করবে না। অবাক হয়ে বললাম: কেন? উত্তর এলো: তারা অনেক বেশি প্রফেশনাল, পরীক্ষায় কি আসবে সেগুলোই শুধু পড়ায়। আমার ভালো লাগে জানার জন্য পড়তে, শুধু পরীক্ষার পড়া না। আমি বললাম: তথাস্তু। যথারীতি তিনজন টিচার চারটি সাবজেক্ট পড়ান। বলে রাখি এবারও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সে ম্যাথ, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি চারটেই নিয়েছে।

পুরোটা সময় আমি দায়িত্বশীল মা হিসেবে দুটো কাজ করছি- টিচার আসলে তিনি যেন নাস্তা খেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করছি আর মাসের শুরুতে খামে ভরে ছেলের মাধ্যমে রেমুনারেশন-টুকু পৌঁছেছি। এ-লেভেল তখন শেষ পর্যায়ে, একজন টিচার আমার সাথে একবার দেখা করতে চাইলেন। তিনি বললেন: গত প্রায় দুবছর এখানে পড়াই অথচ আজকে প্রথম আপনার সাথে সরাসরি কথা হচ্ছে। সমস্ত প্যারেন্টস ছেলেমেয়ের মডেল টেস্টের নাম্বার নিয়ে নানান ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন, অথচ আপনি কোনোদিন কোনো কথাই বলেন নাই। আমি হাসতে হাসতে বললাম: আমার ছেলে আমাকে আপনাদের গল্প বলেছে, আপনাদের সাথে পড়ার সময়টা সে খুব উপভোগ করে। এটাই আমার জন্য বড় পাওনা, ফলাফল যা হবার তাই হবে।

এ লেভেলের রেজাল্টও মোটামুটি ভালোই করলো। এবার জীবনে আরও বড় সিদ্ধান্ত নেবার পালা। জিজ্ঞেস করলাম: এবার কী পড়বে? নির্দ্বিধায় উত্তর দিল: বায়োকেমিস্ট্রি। রীতিমতো আঁতকে উঠলাম। আমি কেমিস্ট্রি-কে যমের মতো ভয় পাই, তারপর আবার অর্গানিক! সিআরএইচ-এর চক্করে আমার মাথা ঘোরা শুরু করল। বললাম: এত সাবজেক্ট থাকতে কেমিষ্ট্রি কেন? উত্তর দিল: স্যার এত মজা করে আর চমৎকারভাবে আমাকে পড়িয়েছেন যে, এই সাবজেক্টটা আমার খুবই ভালো লেগেছে, আমি এটা নিয়েই পড়তে চাই। জগতের মানুষ আবারও আমাকে নিয়ে ছি ছি করলেন।বুয়েটে না হোক, নিদেনপক্ষে কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে তো ইঞ্জিনিয়ারিং-এ দিতে পারতাম অথবা প্রাইভেট মেডিকেলে-ও তো খারাপ হতো না। শেষমেষ কিনা বায়োকেমিস্ট্রি!

অবশেষে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি-তে ভর্তি হলো। কদিন বাদে স্কলারশিপ এর জন্য এপ্লাই করবে। এবাবদে আমাকে যেসব কাগজপত্র দিতে হলো, তা বোধহয় খোদ ইনকাম ট্যাক্স এর অফিসেও জমা দেইনি। হঠাৎ শুনি আমাকেও নাকি যেতে হবে ইন্টারভিউ দিতে। বিচিত্র আরেক অভিজ্ঞতা।

এডমিন কক্ষে আমি এবং আরো বেশ কয়েকজন প্যারেন্টস-সহ বসে আছি। তাদের কেউ কেউ আবার ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। লক্ষ্য করলাম ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, প্যারেন্টসদের সাথে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে না চেয়ে বরং ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে এক রকম তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলে চলেছেন।

এবার এলো আমার পালা। প্রশ্নকর্তা যা যা প্রশ্ন করছেন তার উত্তর কাগজপত্রেই আছে। এ ধরনের বিষয় জানার জন্য অফিস কামাই দিয়ে এত দূর থেকে মানুষগুলোকে টেনে আনার কোনো কারণ নেই। আমাকে জিজ্ঞেসাবাদের পরে এবার আমি জানতে চাইলাম: স্কলারশিপ দেবার ক্রাইটেরিয়া কী? একাডেমিক পারফরমেন্স নাকি বাবা-মায়ের ফাইনান্সিয়াল কন্ডিশন? নাকি দুটোই। সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার প্রক্রিয়া কি? কোনো গ্রহণযোগ্য উত্তর পেলাম না। ভেতরে ভেতরে আবার সেই ছোটবেলার কথা মনে হলো। এইবার বোধহয় শেষ ফাইটটা দিতেই হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা গেলাম ভিসি মহোদয়ের রুমে। তিনি না থাকায় তার সহকারীর কাছে আমার অভিজ্ঞতা আর মতামত লিখিতভাবে জানিয়ে আসলাম। পরে জেনেছি এরকমভাবে প্যারেন্টসদেরকে ডেকে ইন্টারভিউ নেয়ার প্রচলনই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অন্তত পরের বছরগুলোতে আমাকেও আর যেতে হয়নি।

সেই ইউনিভার্সিটিও একদিন শেষ হলো। এবারে সে বায়োইনফরমেটিক্স পড়তে বিদেশে যাবে। এই সাবজেক্ট এর বিন্দু বিসর্গ বুঝি না। কাজেই পড়াশোনার ব্যাপারে তাকে কোনো পরামর্শ দিতে পারিনি। তবে যাবার আগে দুই সপ্তাহের একটা ফুল কোর্স এসাইনমেন্ট করিয়ে দিয়েছি। অন্য মায়েদের মতো বিদেশে যাবার আগে ভাল-মন্দ রেঁধেবেড়ে খাওয়ানোর বদলে তাকে নিজে নিজে বাজার, কাটাকুটি, রান্না, ফ্রিজিং, নিজে বেড়ে খাওয়া- পুরো দুসপ্তার রেসিডেনশিয়াল ট্রেনিং-এ রাখা হলো। এর মধ্যে ওর রান্নার হাত মোটামুটি ভালোই চলে এসেছে, আমাকেও মাঝেমধ্যে খাওয়ালো। অন দি জব কোর্স শেষে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম: এখন ঠিকমতো রান্না পারিস? উত্তর দিলো: মোটামুটি চালাতে পারব। আমি এবার জিজ্ঞেস করলাম: ঠিকমতো মসলা দিতে শিখেছিস? ও বলল: হ্যাঁ, তুমিই তো শিখিয়েছ। মাঝেমধ্যে শুধু কোন রান্নাটা কীভাবে করতে হয়, সেটা মুখে বলা ছাড়া আমি বা হোম ম্যানেজার তো তার ধারে কাছে যাইনি! তবে শিখালাম কীভাবে? কাজেই অবাক বললাম: আমি? কীভাবে? উত্তরে বলল: কেন তুমি তো বলেছো আন্দাজমতো মশলা দিতে, তাই তো দিয়েছি!

ফেইসবুক কমেন্ট - Facebook Comments
TAGS
1 Comment
  1. Reply

    হাসিন জাহান

    September 22, 2019

    ধন্যবাদ!

Leave a Reply to হাসিন জাহান / Cancel Reply