আমার দ্বিতীয় ইন্টারভিউ
যে আমলের কথা বলছি, তখন বিডিজবসের নামনিশানা ছিল না। কাজেই চাকরির সন্ধানে বাংলা অথবা ইংরেজি নিউজপেপারই ছিল একমাত্র ভরসা। এখনকার ছেলেমেয়েদের মতো ক্যারিয়ার-ভাবনা সেসময় তেমন ছিল না বললেই চলে। চাকরি পাওয়াটাই ছিল বড় কথা।
এলজিইডিতে আমার চাকরিজীবনের প্রথম অধ্যায় চলছিল। হঠাৎ একদিন টেবিলের উপর পেলাম একটা চাকরির বিজ্ঞাপনের কাটিং। তার উপর আমার নাম লেখা। বড় স্যারের (এলজিইডির প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার) নৈমিত্তিক কাজের অংশ হিসেবে তিনি প্রতিদিন ভোরে খবরের কাগজ পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদে টিক চিহ্ন দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত অফিসারদের নাম লিখে দিতেন। দশটা-এগারোটা নাগাদ সেসব খবরের কাটিং-এর ফটোকপি নাম অনুযায়ী প্রত্যেক অফিসারের টেবিলে পৌঁছে যেত। মজার ব্যাপার ছিল এইসব নিউজ কাটিং-এ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ খবরের পাশাপাশি বিভিন্ন আর্টিকেল, মজার খবর, এমনকি চাকরির খোঁজও থাকতো। ঠিক এভাবেই সেদিন আমার হাতে এসে পড়ে আইটিএন-বুয়েটের চাকরির বিজ্ঞপ্তি।
তখনও বর্তমানের এই আইটিএন-বুয়েটের যাত্রা শুরু হয়নি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের উদ্যোগে আইটিএন-বুয়েট প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তৈরি প্রকল্পে কাজ করার জন্যই এই বিজ্ঞাপন। যে পদগুলোর জন্য বিজ্ঞাপন, সেগুলোর একটা ছিল কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট, আরেকটা টেকনোলজি স্পেশালিস্ট। দুটোতেই বেশ লম্বা অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে।তবে টেকনোলজি স্পেশালিস্ট পদে পিএইচডি অগ্রাধিকার পাবে।
সরকারি স্কেলের প্রারম্ভিক বেতনে তখন ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা। কাজেই ভাবলাম এপ্লাই করেই দেখি! অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম যেহেতু আমার পিএইচডি নেই, তাই কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট-ই সই। অভিজ্ঞতা যদিও একেবারেই কম, মাষ্টার্সে কমিউনিটি এবং ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যেটুকু পড়াশোনা আছে, ওটাই সম্বল। আমাকে অবাক করে দিয়ে কয়েকদিনের ভেতরই ইন্টারভিউয়ের ডাক পড়লো।
ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতিতে এখনকার মতো ইউটিউবের টিউওটোরিয়াল ছিল না। আর জানা ছিল না ওয়েবসাইট ঘেঁটে প্রস্তুতি নেয়ার কৌশলও। ছোট বাচ্চা নিয়ে চাকরি – সংসার সামাল দিয়ে পড়াশোনা করে ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নেয়া এক কথায় অসম্ভব। অতএব উপস্থিত বুদ্ধিই ভরসা!
ইন্টারভিউয়ের দিন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বরং সাজগোজেই মন দিলাম। একজন সুযোগ্য কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট-এর ‘লুক’ আনার জন্য হালকা রঙের সুতির শাড়ি, চুল টেনে খোঁপা, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর হাতে সাধারণ মানের ক্যাসিও ঘড়ি- যেন মাঠে যাবার জন্য রেডি! ভয় একটাই, মাত্র চার বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশ বড় পদের প্রার্থী হতে যাচ্ছি!
বেরুবার আগে প্রস্তুতি যথাযথ হয়েছে কিনা যাচাই করার জন্য আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলাম: দেখ তো, আমাকে যথেষ্ঠ বয়স্ক দেখাচ্ছে কিনা? সে আমার দিকে তাকিয়ে করুণ সুরে বললো: আম্মার কাছ থেকে চুন নিয়ে কানের দুপাশের চুলে লাগায় নেও, তাহলেই হবে! এবার শাশুড়ির কাছে একই কথা জিজ্ঞেস করলাম। উনি মহা বিরক্ত হয়ে বললেন: এত শাড়ি থাকতে বুড়া মানুষের মতো এই শাড়ি পরছ কেন? বললাম: এইটা তো সিনিয়র পজিশন, আমাকে যে ডাকছে এইটাই বেশি। আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বললেন: আমি জানি তুমি পারবা, চিন্তা কইর না। যাইহোক শেষমেষ উনার দোয়া নিয়ে রওনা হলাম – দেখি না কী হয়!
ইন্টারভিউ বোর্ডে দেশি-বিদেশি বাঘা বাঘা বেশ কজন ছিলেন যাদের কাউকেই তখন চিনতাম না। সার্বিকভাবে ইন্টারভিউ পরিচালনা করছিলেন প্রয়াত ড. বাবর কবির। যারা উনাকে চিনতেন, তাঁরা জানেন উনি কতটা চৌকস বক্তা। উনি তার স্বভাবসুলভ নাটকীয় ভঙ্গিতে চোস্ত ইংরেজিতে শুরু করলেন: আচ্ছা বলুন তো, কেন আপনাকে এই পদে নেয়া হবে? প্রশ্ন শুনে আমি তো মহা হতবাক। বলে কী? উনারা কেন আমাকে নেবেন, সেটা আমি কেমন করে জানবো! আমি তখন আসলেও জানতাম না যে, এটা ইন্টারভিউ বোর্ডের খুব কমন একটা স্টার্টার এবং সবাই এই প্রশ্নের উত্তরটা ঠোঁটের আগায় রেডি করে রাখে!
যাইহোক, আমি যথারীতি হাত-পা নেড়ে, চোখ গোল করে বিষ্ময়ের সাথে ইংরেজিতেই উত্তর দিলাম: আপনারা আমাকে কেন নেবেন সেটা তো আমি জানি না। তবে আমি কেন এই পদে আবেদন করেছি, সেটা বলতে পারি। আমি থামতেই উনি কথা চালিয়ে যাবার ইশারা দিলেন।
তারপর কি উত্তর দিয়েছিলাম ঠিক মনে নেই। প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে এক পর্যায়ে ইন্টারভিউ শেষ হলো।আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন, বিশাল ফাঁড়া কাটলো! সিদ্ধান্ত নিলাম এ জীবনে আর ইন্টারভিউ দিব না!
তখনও জানি না সামনে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে! কয়েকদিন বাদে ফোনে জানানো হলো ‘কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট’ পদে আমার চাকরি হয়নি। খুবই স্বাভাবিক। অবাক হলাম না। তারপরেই আমাকে অবাক করে দিয়ে জানানো হলো, ‘… তবে, বোর্ড আমাকে টেকনোলজি স্পেশালিস্ট পদে নির্বাচিত করেছে!… ‘
অবশেষে আইটিএন-বুয়েটের প্রথম কর্মী হিসেবে আমি যোগ দেই।
ফিরোজ স্যার ও মুজিবুর রহমান স্যারের সাথে আইটিএন-এ কাজের হাতেখড়ি। সাথে ছিলেন আক্তারুজ্জামান ভাই- প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর, মোহসীন ভাই- কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট, এডুকেশন এডভাইজার প্রফেসর এলি দাহী। সহযোগী হিসেবে আলিম, মোল্লা, সিরাজ, এনামুল আর প্রয়াত আল আমীন। ফিরোজ স্যারের রুমে আইটিএন-এর প্রথম টেম্পোরারি অফিস থেকে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেসব স্মৃতি আর গল্প আরেকদিনের জন্য তোলা থাক।
চাকরি শুরুর বেশ কমাস পরে পুরনো কাগজপত্র গোছাতে গিয়ে আমার সেই ইন্টারভিউয়ের স্কোরিং-এর কিছু বিচ্ছিন্ন কাগজ আমার হাতে এসে পড়ে। সম্ভবত এলি দাহীর। সেখানে দেখি আমার সিভির উপর লাল কালির বিশাল গোল আঁকা আর তার ভেতর বড় করে করে লেখা 27 yrs। বুঝলাম মেকআপের আড়ালে আমার ‘ডেট অব বার্থ’ লুকাতে পারিনি।
বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প হিসেবে ড. বাবর কবিরের কাছে ছিল আমাদের এডমিনিস্ট্রেটিভ রিপোর্টিং। সেই সুবাদে উনার সাথে পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছি।
বাবর ভাইয়ের কথা যখন উঠলো, উনার প্রসঙ্গে দুটো কথা না বললেই না। ছুরি-কাঁটা দিয়ে যারা নিঃশব্দে খান, তাদেরকে আমার স্যালুট। আমি এখন পর্যন্ত এনিয়ে হিমসিম খাই। আর খাবার সময় যদি পাশে কোন বিদেশি বসা থাকেন, তো বিড়ম্বনা এককাঠি বাড়া। বাবর ভাইকে দেখেছি ছুরি দিয়ে দিব্যি পরোটা কেটে তার ভেতরে কেমন করে যেন সব্জিভাজি আর ওমলেট কাঁটাচামুচ দিয়ে পেঁচিয়ে নিখুঁত ভাবে খেতে পারতেন! উনার এই টেকনিকটা খুব ভালোভাবে আড়চোখে লক্ষ্য করতে করতে এক সময় আমিও যেন কীভাবে সেটা রপ্ত করে ফেললাম। উনার আরো একটা বিষয় আমাকে খুব অবাক করতো – কথা বলার সময় তার ‘প্যাশন’ যেভাবে প্রকাশ পেত !
একবার রিট্রিটের সময় বিকেলে গল্পের আসরে তিনি আমার ইন্টারভিউয়ের প্রসঙ্গ তুললেন। মজা করে বর্ণনা করার সময় বললেন, ‘হাসিন যখন অবাক বিষ্ময়ে বললেন যে আপনারা আমাকে কেন এই পদে নেবেন, সেটা আমি জানি না …।’ সেই মুহূর্তে উনার মনে হয়েছিল যে ‘শেষ অবধি এই মেয়েটাই ইন্টারভিউয়ে টিকে যাবে’।
এই অপ্রত্যাশিত সরল উত্তর পোড়খাওয়া জাঁদরেল মানুষটির কাছে বোধহয় একটা আলাদা জায়গা করে দিয়েছিল। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী ‘আমি জানি না’ কথাটা তাঁর মনে বড় রকম দাগ কেটেছিল।
আমি এরপরেও জীবনে আরো ইন্টারভিউ দিয়েছি এবং বহুবার খুব সহজেই বলেছি ‘আমি জানি না’। আমার জানার পরিধি খুব বড় না। আবার কিছু না জেনে, জানি বলাটাও আমার ধাঁচে পড়ে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো: না জানলে, প্রতি মুহূর্তেই জানার সুযোগ তৈরি হয়। আর ‘জানি’ বলে ফেললেই আরো জানার পথটা বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে যত না ইন্টারভিউ দিয়েছি তারচেয়ে অনেক বেশি ইন্টারভিউ নিয়েছি। লক্ষ্য করে দেখেছি হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধিরা কিছু ‘সেট’ প্রশ্নের ব্যাপারে ভীষণ সেন্সেটিভ থাকেন। সেসব প্রশ্নের উত্তরে প্রার্থী কতটা যুক্তিপূর্ণভাবে দিয়েছেন সেটা পরবর্তীতে প্রার্থীর যোগ্যতা নিরূপণে ভূমিকা রাখে। অন্যতম এমন একটা প্রশ্ন হলো: প্রার্থীকে তার সবলতা-দুর্বলতার দুএকটা নমুনা বলতে বলা। যদি প্রার্থী সত্যি কথা বলেন, তবে উনি পুরাই ধরা। কাজেই প্রার্থীও সাধারণত পূর্বপ্রস্তুতি অনুযায়ী এমন সব দুর্বলতা তুলে ধরেন যা প্রকারান্তরে তার সবলতা হিসেবেই মনে হয়। এসব দেখে-শুনে আমি মনে মনে হাসি। মাঝে মধ্যে মনে হয় আসলেও কী আধঘন্টার জেরায় মানুষ চেনা যায়? মানুষ চেনার জন্য সম্ভবত অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োজন!
Md Rafiqul islam
আপা আপনি সত্যি জিনিয়াস। আপনার টিম এ ভবিষ্যৎ এ আল্লাহ যেন কাজ করার সুজগ দেই। জানার এবং সেখার আছে অনেক কিছু। সারল্লে ভরা লেখনির মাঝে পাঠক কে আটকে রাখার শক্তি আছে আপনার।
Hasin
Thanks a lot!
Munni sheikh
Hasin Jahan শিমুল…..তোমার লেখা আমি খুব মনোযোগ না শুধু,, গুন দিয়েও পড়ি।।কয়দিন মনটা এতো খারাপ ছিলো যে মনের মধ্যে বিয়োগ কাজ করছিলো।।তিনবার পড়লাম কিছুই বুঝলামনা।। তারপর মনে সান্তনা দিলাম এটাতো আমার সাবজেক্ট না…
আমিতো সম্পূর্ণ হাউজ ওায়াইফ…
কিন্তু মনের কেনো জানি একটা প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠলো।।কেনো বুঝছিনা? তার পর একটু অফ দিলাম।।।
আবার পড়লাম,, তখন এতো হেসেছি…বিশেষ করে এই লাইন কয়টা মনটা এতো ভালো করে দিয়েছে…..
আচ্ছা বলুন তো, কেন আপনাকে এই পদে নেয়া হবে? প্রশ্ন শুনে আমি তো মহা হতবাক। বলে কী? উনারা কেন আমাকে নেবেন, সেটা আমি কেমন করে জানবো! আমি তখন আসলেও জানতাম না যে, এটা ইন্টারভিউ বোর্ডের খুব কমন একটা স্টার্টার এবং সবাই এই প্রশ্নের উত্তরটা ঠোঁটের আগায় রেডি করে রাখে!
যাইহোক, আমি যথারীতি হাত-পা নেড়ে, চোখ গোল করে বিষ্ময়ের সাথে ইংরেজিতেই উত্তর দিলাম: আপনারা আমাকে কেন নেবেন সেটা তো আমি জানি না। তবে আমি কেন এই পদে আবেদন করেছি, সেটা বলতে পারি। আমি থামতেই উনি কথা চালিয়ে যাবার ইশারা দিলেন।
আমাকে ভীষন হাসিয়েছে,,,মনটা ভালো হয়ে গেলো”শিমুল”
তুমি আমার পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে।।অনেক বালোবাসিরে,…..
Hasin
এর পরের লেখাটা তোমার অনেক পছন্দ হবে ভাবি!
Munni Sheikh
“হাসিন জাহান শিমুল ” তেমার লেখা আমি খুব মনোযোগ কেনো গুণ দিয়েও পড়ি পারলে।। কদিন মনটা এতো খারাপ ছিলো যে মন দিতে পারছিলামনা।।তিনবার পড়েছি তারপরও কিছুই বুঝলামনা!!তারপর মনকে সান্ত্বনা দিলাম,,এটাতো আমার সাবজেক্ট না? আমিতো সম্পূর্ণ হাউজ ওয়াইফ।।কিন্তু মনের কোনে একটা প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠছিলো।।কিছুদিন অফ রাখলাম।।আজ সকালে আবার পড়লাম এতো হেঁসেছি বিশেষ করে এই লাইন গুলি।।।আচ্ছা বলুন তো, কেন আপনাকে এই পদে নেয়া হবে? প্রশ্ন শুনে আমি তো মহা হতবাক। বলে কী? উনারা কেন আমাকে নেবেন, সেটা আমি কেমন করে জানবো! আমি তখন আসলেও জানতাম না যে, এটা ইন্টারভিউ বোর্ডের খুব কমন একটা স্টার্টার এবং সবাই এই প্রশ্নের উত্তরটা ঠোঁটের আগায় রেডি করে রাখে!
যাইহোক, আমি যথারীতি হাত-পা নেড়ে, চোখ গোল করে বিষ্ময়ের সাথে ইংরেজিতেই উত্তর দিলাম: আপনারা আমাকে কেন নেবেন সেটা তো আমি জানি না। তবে আমি কেন এই পদে আবেদন করেছি, সেটা বলতে পারি। আমি থামতেই উনি কথা চালিয়ে যাবার ইশারা দিলেন।
মনটা খারাপ ছিলো এতোদিন হাসতে চাইলেও হাসতে পারিনি।।।ঐ লাইন গুলো কিযে হাসিয়েছে।। মনটা ভালো হয়ে গেলো☺’
শিমুল’ তুমি আমার পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে ?অনেক ভালোবাসিরে…..