হাসিন জাহান
ঢাকা, বাংলাদেশ

আমি হাসিন। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পৌঁছেছি জীবনের প্রায় মাঝ বরাবর। পথ চলতে চলতে অনেক কিছু দেখা হয়েছে, জানা হয়েছে, শেখা হয়েছে। অনেক সময় চোখের দেখার বাইরেও অনেক বিষয় অনুধাবন করেছি ভিন্নভাবে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনই বোধহয় এক একটা উপন্যাস। আমার জীবনের উপন্যাসের পাতাগুলো থেকে কিছু পাতা ছিঁড়ে ডিজিটাল স্মৃতির খাতায় জমা রাখার জন্য এই ব্লগ। আর তাতে যদি কারো ভালো লাগে, সেটা হবে বাড়তি পাওনা। একটাই জীবন, তাই এর প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে উঠুক আনন্দময় আর আলোকিত!

খোঁজ করুন
খোঁজ করুন
আপন ভাবনা

যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই

on
May 23, 2020

মানুষের চাওয়াগুলো আসলে স্ট্যাটিক না। হয়তো বেশির ভাগ সময়েই ‘না পাওয়া’-গুলোকেই পাওয়ার জন্য আমরা হাহাকার করি। এই করোনার অবসরে অনেকের সাথেই তাদের বাস্তবতা নিয়ে আলাপ হয়েছে। একসময় অনেক স্ত্রীর আক্ষেপ ছিল, যে তার স্বামী ঘরে থাকেন না এবং তাকে সময় দেন না। আজ যখন সেই স্বামীই সারাদিন ঘরে থাকছেন এবং স্বভাবসুলভভাবে একটু আরাম খুঁজছেন, আর পাশাপাশি এটা দাও, ওটা করো, আর সেটা হয়নি কেন বলেছেন, তখন সেই ‘না পাওয়া’ স্বামীকে মাত্রাতিরিক্ত পাওয়ায় স্ত্রীর বিরক্তির অন্ত থাকছে না। অনেক স্বামীই ভেবেছেন স্ত্রীর কাজ- অফিসে যাওয়া-আসা আর বেতন পাওয়া, তার পরিশ্রমের গভীরতা অনেকেই আন্দাজ করেননি। আজ করোনার বন্দীদশায় যখন দেখছেন, ল্যাপটপ ছেড়ে এসে সেই স্ত্রীর নাওয়া খাওয়াই মুশকিল, তখন হয়তো বুঝতে পারছেন, তার কাজের গুরুত্ব আর চাপ কতটুকু।

আরো আছে! একসময় বাচ্চাদেরকে যথেষ্ঠ সময় দিতে পারেননি ভেবে যারা মনো-যাতনায় ভুগেছেন, আজ তাদের সার্বক্ষণিক সরব উপস্থিতি আর তাণ্ডবে নিজেরাই ধৈর্যহারা হচ্ছেন। যে গৃহকর্মীর উপর তার কাজের পারঙ্গমতার অভাব নিয়ে সবসময় একধরনের চেপে থাকা বিরক্তি নিয়ে থাকতেন, তার অনুপস্থিতি এখন তাকে করে তুলেছে সবচেয়ে কাম্য ব্যক্তি। আর তরুণ প্রজন্মের কথা? সেদিন একজন জানালেন আপা, যেদিন লকডাউন শেষ হবে, সেদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা দৌড় দেবো, কোথায় যে যাবো জানি না, আর পারছি না!

রোজ সকালে উঠে পরিপাটি হয়ে অফিসে যাওয়া, কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সাথে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে অফিসচর্চা করা, বাড়ি ফিরে গা এলিয়ে দিয়ে বাচ্চাদের সাথে খুনসুটি করা, বাসার কাজে অল্প-স্বল্প হাত লাগানো আর সপ্তাহান্তে বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেয়া, কিংবা পরিজনদের গরম শিককাবাবে কামড় দেয়ার মজাই আলাদা! আগের এইসব তুচ্ছ বিষয়গুলো আজ কত মূল্যবান। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়াটা যাদের জন্য ছিল প্রতিদিনের মর্মবেদনা, আজ তারা দিন গুনছেন কবে অফিস খুলবে!

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বেড়েছে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের হার। বেড়েছে ‘মনের বন্ধু’র মতো অনলাইন কাউন্সিলিং-এ ফোনকলের হার। হবে না-ই বা কেন? সোসাল মিডিয়ার ট্রলে দেখেন অথবা টিভির পর্দার বিজ্ঞাপনে। বাসার সবকাজই যেন মেয়েদের। ছেলেরা হয়তো তাদেরকে সাহায্য করছেন, তাতেই বাড়া! নানারকম অখাদ্য ট্রলে আপনার-আমার ইনবক্স সয়লাব। আমার এক পুরনো সহকর্মী কিছুক্ষণ আগে একটা বেশ নামকরা প্লাটর্ফমে পাবলিশ করা ট্রল ইনবক্সে পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, আপা, কাজ কি শুধুই মেয়েদের, সবাই কেন বোঝে না কাজ প্রত্যেকের নিজের জন্য? বলেন তো, কবে এসবের পরিবর্তন হবে? আমি বললাম, বসুন্ধরা কিংবা ওমেরার এলপি গ্যাস আর অল টাইম ব্রেড থেকে শুরু করে রাধুনির হালিম সবই তো মেয়েদের হাতে! কাজেই এর শেষও হতে পারে মেয়েদেরকে দিয়েই। যেদিন সব মেয়েদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে, হয়তো সেইদিনই এর পরিবর্তন ঘটবে।

তবে কিছু পরিবর্তনের সুযোগ কিন্তু আমাদের সবার হাতেই রয়েছে। আসুন মেয়েদেরকে নিয়ে অযাচিত ট্রলে লাইক করা, শেয়ার করা অথবা ইনবক্স করা থেকে অন্তত নিজে বিরত থাকি। আপনি যাকে ইনবক্স করছেন, একবার ভাবুন সে আপনাকে কোন মাপকাঠিতে দেখছে!

ফেইসবুক কমেন্ট - Facebook Comments
TAGS

LEAVE A COMMENT