ছন্দপতন
করোনা আতঙ্কের মাঝে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি বিষয় নিয়ে আজ লিখবো। আমি দীর্ঘদিন যাবত ‘মাসিক ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে কাজ করছি। সব সময় বলে এসেছি, এটি একটি ‘less talked’ বিষয়।
জীবনে নতুন করে জানবার কোনো শেষ নেই। তবে হয়তো এর চাইতেও বেশি ‘less talked’ বিষয় আছে, তা হলো ‘মেনোপোজ’। আমি নিজেই এ বিষয়ে কিছু জানতাম না, কাউকে কখনো তেমন কিছু আলোচনাও করতে শুনিনি। কেবল শুনেছি হট ফ্ল্যাস হয়।
কদিন আগে বিষয়টা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলাম। একটু আধটু যা জানলাম তাতে তো আমি হতবাক! আগে ‘মেনোপোজ’ মানে জানতাম, মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। কিন্তু এর আসল অর্থ হলো শেষ মাসিক। শেষের দিকে এসে অনেকেরই অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। তবে যেবার মাসিক হবার পরে আর পুরো এক বছর মাসিক হবে না, সেই শেষ মাসিকটিকেই বলে মেনোপোজ। সাধারণত ৪৭ থেকে ৫২ বছর বয়সের মধ্যেই এটা হয়।
জানার আরো অনেক কিছু বাকি! মেনোপোজের আগের সময়টিকে বলে ‘পেরি মেনোপোজাল পিরিয়ড’। এটা ব্যক্তিভেদে ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তার মানে এর শুরুটা হয় যথেষ্ট অল্প বয়সে, অর্থাৎ প্রায় ৩৭ পরবর্তী যে কোনো সময় থেকেই এটা শুরু হতে পারে। এই সময় থেকেই মেয়েরা নানা রকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। তবে সবার ক্ষেত্রে পরিবর্তনগুলো এক রকম হয় না।
সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটা শুরু হয় যখন ক্ষণে ক্ষণে গরম লাগে আর ঘেমে-নেয়ে উঠতে হয়। অনেকেরই গায়ের চামড়া কেমন যেন জ্বালা করে! রাতে প্রায় চার-পাঁচবার ঘুমের ভেতরও একই কাণ্ড ঘটে। কাজেই এক-ঘুমে রাত কাবার করার বিলাসিতা আর থাকে না।
স্মৃতির পাতা হাতড়ে দেখি, এ কী! আমার মা-খালা-শাশুড়ি, তারাও তো এ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন! অথচ তাদের কখনও তো এ নিয়ে কিছু বলতে শুনিনি! আমি আমার মায়ের শেষ বয়সের সন্তান। আমার বুদ্ধি হবার পর থেকে আম্মাকে খুব একটা ভালো মেজাজে দেখিনি। এখন হিসেব করে দেখি তিনি তখন ‘পেরি মেনোপোজাল’ সময়ে ছিলেন। নিয়মিতভাবে রাতে ঠিকমতো না ঘুমালে, সকালে উঠে মেজাজ সামাল দেয়া সত্যি সত্যিই কঠিন। তখন মানুষ ছোটেখাটো বিষয়ে কেমন যেন ধৈর্য হারায়!
আমার শাশুড়িকে দেখেছি তিনি প্রায়ই বলতেন গা-জ্বালা করে। অনেক সময়ে ব্লাউজের বদলে শাড়ির আঁচলে গা ঢাকতেন। আহা, তখন তো এসব বুঝিনি! এ নিয়ে ডাক্তারের কথাও কেউ কখনো ভাবিনি!
এসব উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে আনতে ডাক্তার অনেক সময়েই HRT বা ‘হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি’ দেন। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি আছ। অবশ্য তা নিয়ে বিতর্কও আছে। তবে প্রাকৃতিকভাবেও অনেকটাই ম্যানেজ করে চলা সম্ভব। যেমন প্রতিদিন একটু হাঁটাহাঁটি করা, খাবারের মেনুতে কিছু পরিবর্তন আনা, মনঃসংযোগের জন্য মেডিটেশন করা, নির্দিষ্ট কিছু যোগ ব্যায়াম করা এবং সর্বোপরি সচেতনভাবে নিজেকে ভালো আর নিয়ন্ত্রণে রাখা। সেইসাথে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম বা নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিন খাওয়াও দরকার।
হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমার স্বাভাবিক জীবনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটছে! কারণে-অকারণে হঠাৎ করে গরম লাগছে। সেদিন নিজের রুমে এসি চালিয়ে আমি প্রায় ঘামছি। সে সময়ে সামনে বসা এক সহকর্মী করুণ ভঙ্গিতে বললো: আপা এসিটার ঠান্ডা একটু কমান শীতে জমে যাচ্ছি। বলে কী! হট ফ্ল্যাস হচ্ছে নাকি!
আমি নিজেও হয়তো এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি! যদি করোনার ফাঁদে পা দিয়ে জীবনটা না খোয়াই, তবে যতটা নেচারাল থাকা যায়, সেভাবেই Graceful and peaceful aging চাইবো। এটাও একটা নতুন অধ্যায়ের শুরু – Life begins at fifty!
ফেইসবুক কমেন্ট - Facebook Comments