হাসিন জাহান
ঢাকা, বাংলাদেশ

আমি হাসিন। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পৌঁছেছি জীবনের প্রায় মাঝ বরাবর। পথ চলতে চলতে অনেক কিছু দেখা হয়েছে, জানা হয়েছে, শেখা হয়েছে। অনেক সময় চোখের দেখার বাইরেও অনেক বিষয় অনুধাবন করেছি ভিন্নভাবে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনই বোধহয় এক একটা উপন্যাস। আমার জীবনের উপন্যাসের পাতাগুলো থেকে কিছু পাতা ছিঁড়ে ডিজিটাল স্মৃতির খাতায় জমা রাখার জন্য এই ব্লগ। আর তাতে যদি কারো ভালো লাগে, সেটা হবে বাড়তি পাওনা। একটাই জীবন, তাই এর প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে উঠুক আনন্দময় আর আলোকিত!

খোঁজ করুন
খোঁজ করুন

বাংলাদেশে আমাদের কাজ দেখতে আফ্রিকার চারটি দেশ থেকে ওয়াটারএইডের প্রতিনিধিদের আগমন। স্বভাবতই মাঠের কাজ দেখানোর পাশাপাশি তাদের সার্বিক যত্ন-আত্তির ভারও আমার উপর। তাদেরকে নিয়ে সাতসকালে প্লেনে চেপে সৈয়দপুরে যাবার পরিকল্পনা।

মাঝরাতে বিদেশি অভ্যাগতদের একজনের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পেলাম। জানান না দিয়ে হঠাৎ তার পিরিয়ড শুরু হয়েছে। তিনি জানতে চেয়েছেন, আমি কি তাঁর জন্য সকালে এক প্যাকেট স্যানিটারি প্যাড নিয়ে আসতে পারবো? আর সেটা সম্ভব না হলে তিনি নিজেই ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট থেকে কিনবেন। এই মেসেজে মনে মনে আমি প্রমাদ গুনলাম! আমাদের ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টে কি কোন ব্যবস্থা আছ? কই, কিছু দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না!

যাইহোক, সাত সকালে প্যাডের ব্যবস্থা করে সোজা এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। কিন্তু মনের ভেতর খচখচ করছে! ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টের ভেতরে গিয়ে প্রথমে যতসামান্য দোকানগুলো পর্যবেক্ষণ করলাম। স্যানিটারি প্যাডের সন্ধান না পেয়ে এয়ারপোর্টের একজন কর্মীকে জিজ্ঞেস করলাম- ভাই, এখানে স্যানিটারি প্যাড কোথায় পাব? একটু জরুরি দরকার ছিল।
বেচারা মোটামুটি আতংকিত হয়ে পড়লেন। বোধহয় জীবনে প্রথম তিনি এমন ভয়ংকর কোন প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন। আমতা আমতা করে দ্রুত তার বসের কাছে গিয়ে কানে কানে জানতে চাইলেন। বস বেশ স্মার্ট। কায়দা করে আমাদের জানালেন ‘এই আইটেম’-টা আমাদের এখন নেই। আগে কিছু একটা ছিল তবে এখন সেটা নষ্ট হয়ে গেছে।’ তার প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে আমি মোটামুটি মুগ্ধ!  ‘এই আইটেম’ ‘কিছু একটা’ – এরকম চমৎকার কিছু শব্দ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করে বেশ বুদ্ধিদীপ্তভাবে ‘স্যানিটারি প্যাড’ সংক্রান্ত অস্বস্তিকর আলোচনা থেকে তিনি মুক্তি পেলেন!

সেখান থেকে বিদায় হয়ে কেবলই ভাবছি, এরকম ঘটনা যেকোনো সময়ে বিদেশি-দেশি নির্বিশেষে যেকোনো নারীর ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। হঠাৎ করে পিরিয়ড হয়ে গেলে ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে একটা ব্যবস্থা নেয়া আসলেই সহজ নয়। ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টে স্যানিটারি প্যাডের ভেন্ডিং মেশিন বসানো খুবই জরুরি। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় আনতে পারেন। পাশাপাশি যারা স্যানিটারি প্যাডের ভেন্ডিং মেশিন বসান তারাও এগিয়ে আসতে পারেন। এছাড়া এয়ারপোর্টের ভিতরে যেসব লাউঞ্জ আছে তারাও এটি সংযোজন করতে পারেন। সবশেষে একটি নারীবান্ধব আভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর দেখবার প্রত্যাশায় থাকলাম।

ফেইসবুক কমেন্ট - Facebook Comments
TAGS

LEAVE A COMMENT