হাসিন জাহান
ঢাকা, বাংলাদেশ

আমি হাসিন। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পৌঁছেছি জীবনের প্রায় মাঝ বরাবর। পথ চলতে চলতে অনেক কিছু দেখা হয়েছে, জানা হয়েছে, শেখা হয়েছে। অনেক সময় চোখের দেখার বাইরেও অনেক বিষয় অনুধাবন করেছি ভিন্নভাবে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনই বোধহয় এক একটা উপন্যাস। আমার জীবনের উপন্যাসের পাতাগুলো থেকে কিছু পাতা ছিঁড়ে ডিজিটাল স্মৃতির খাতায় জমা রাখার জন্য এই ব্লগ। আর তাতে যদি কারো ভালো লাগে, সেটা হবে বাড়তি পাওনা। একটাই জীবন, তাই এর প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে উঠুক আনন্দময় আর আলোকিত!

খোঁজ করুন
খোঁজ করুন
আপন ভাবনা

আমি একজন সেকেন্ড ক্লাস নাগরিক

on
October 18, 2020

মেয়ে হয়ে জন্মানোর ব্যাপারটা অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো! কেমন করে? একটু ভেঙেই বলি। তা, বহু বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স আট কি দশ।বিকেল হলেই বাইরে খেলতে যেতাম। হঠাৎ একদিন সমন জারি হলো- বড় হয়ে যাচ্ছি। কাজেই সেদিন থেকে আমার বিকেলটা দোতালার বারান্দার রেলিং-এ আটকে গেল। আমার ছেলে বন্ধুরা মাঠে দিব্যি খেলছে, আর আমার শৈশব বন্দী হলো বারান্দার রেলিং-এ।

এখন অবিশ্বাস্য মনে হলেও, একসময় আমার চুল ছিল কোমর ছুঁইছুঁই। বিকেল থেকে সন্ধ্যাটা তখন খোলা চুলে বারান্দাতেই কাটতো। কদিন পর, তাতেও নিষেধাজ্ঞা আসলো। খোলাচুলেই নাকি সব সমস্যা। ভূত-পেত্নীর আবাস সংকটেই কিনা, তারা বোধহয় কিশোরীদের খোলাচুলেই ভর করতে শুরু করেছিলো!

সে সময়ে দেশে ‘মিডি’ আর স্কার্টের নতুন চল। দুটোই আমার খুবই পছন্দের পোশাক। কিন্তু খুব বেশিদিন সেগুলো পরার সুযোগ পেলাম না। কারণ, তাতে নাকি পা দেখা যায়! কিন্তু তাতে কি? প্রশ্নটা মাথায় এলেও আমার জাঁদরেল মায়ের রক্তচক্ষুর সামনে জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি। ফলে অচিরেই আমার সেই প্রিয় পোশাক জীবন থেকে হারিয়ে গেল। এর পরে পরলাম ওড়নার কবলে। সেখান থেকে আজ অব্দি বের হবার চেষ্টা করছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত স্থানকালপাত্রভেদে সেই একই বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছি। আমার ছোট ছেলে বেশ ক’বছর আগে হঠাৎ একদিন জানতে চেয়েছিল, why women put on an unrelated piece of cloth with their dress? এই সরল প্রশ্নের কঠিন উত্তরটা আজও আমি দিতে পারিনি।

মেয়েরা অনেক কিছুই আর দশজন ছেলেদের মতো করতে পারে না। তবে সেই সময়ের সাথে এখনের ব্যাপক ফারাকও আছে। তখন পুরুষ সঙ্গী ছাড়া চলাফেরা ছিল একরকম গর্হিত কাজ। দেশের মধ্যে ঘোরাঘুরির একমাত্র জায়গা ছিল কক্সবাজার, তাও তা তোলা থাকতো বিয়ের পরে হানিমুনের জন্য।

সে আমলে অবিবাহিত মেয়েদের বিদেশে পড়ালেখা করা ছিল নৈবচ নৈবচ। ভাগ্যিস আমি ডিভোর্সি আর এক বাচ্চার মা ছিলাম! না হলে আমার তো বিদেশে পড়ালেখাটা আর কোনোকালেই করা হতো না।

যখন প্রথম প্রথম চাকরি করতে শুরু করলাম, তখন শাড়ির প্রচলনই ছিল বেশি।বিশেষ করে সরকারি অফিসগুলোতে। এখন অবশ্য পুরোই ভিন্ন চিত্র। তবে আপনাকে পরিবেশের কাছে সাচ্ছন্দ্যকে বিসর্জন দিতে হবে। আপনি চাইলেই টি-শার্ট কিংবা জিন্স পরতে পারবেন না, তা যত আরামদায়ক-ই হোক না কেন! আপনার অবস্থান এবং অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বহুলাংশে আপনার পোশাক নির্বাচনকে প্রভাবিত করে।

শুধু সে আমল কেন, এ আমলেও আপনি মেয়ে হলে অনেক কিছুই করতে পারেন না। পারবেন মনের আনন্দে একদিন পার্কের বেঞ্চিতে বসে সিগারেটে দুটো টান দিতে? নাহ! আর যদি করেন, তবে অবধারিতভাবে ও দ্রুততার সাথে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাবেন। এবং, শত শত কু-কমেন্টে বারবার ধর্ষিত হতেই থাকবেন।

ফেইসবুক কমেন্ট - Facebook Comments
TAGS

LEAVE A COMMENT